যে সকল যন্ত্র কোনো বস্তু দেখার ব্যাপারে আমাদের চোখকে সাহায্য করে তাদেরকে বীক্ষণ যন্ত্র বা দৃষ্টি সহায়ক যন্ত্র বলে। অণুবীক্ষণ যন্ত্র, দূরবীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি দৃষ্টি সহায়ক যন্ত্র।
করে দেখো : তোমার জীববিজ্ঞানের বাক্সে সাধারণত একটি উত্তল লেন্স থাকে। না থাকলে স্টেশনারি দোকান থেকে একটি ম্যাগনেফাইং গ্লাস জেজাগাড় করে নাও। লেন্সটি তোমার বইয়ের লেখার উপর ধর। এখন এটি উপর নিচে উঠানামা করে দেখো। লেখাগুলো বড় দেখা যাচ্ছে কি? |
---|
কোনো উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্বের মধ্যে কোনো বস্তুকে স্থাপন করে লেন্সের অপর পাশ থেকে বস্তুটিকে দেখলে বস্তুটির একটি সোজা, বিবর্ধিত ও অবাস্তব বিশ্ব দেখা যায়। এখন এই বিশ্ব চোখের যত কাছে গঠিত হবে চোখের বীক্ষণ কোণও তত বড় হবে এবং বিশ্বটিকেও বড় দেখাবে।
কিন্তু বিশ্ব চোখের নিকট বিন্দুর চেয়ে কাছে গঠিত হলে সেই বিম্ব আর স্পষ্ট দেখা যায় না। সুতরাং বিশ্ব যখন চোখের নিকট বিন্দু অর্থাৎ স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্বে গঠিত হয় তখনই তা খালি চোখে সবচেয়ে স্পষ্ট দেখা যায়। ফলে যে সমস্ত লেখা বা বস্তু চোখে পরিষ্কার দেখা যায় না তা স্পষ্ট ও বড় করে দেখার জন্য স্বল্প ফোকাস দূরত্বের একটি উত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয়। উপযুক্ত ফ্রেমে আবদ্ধ এই উত্তল লেন্সকে বিবর্ধক কাচ বা পঠন কাচ বা সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে [চিত্র :৬.১২]। এই যন্ত্রে খুব বেশি বিবর্ধন পাওয়া যায় না।
এর বিবর্ধনের রাশিমালা,
এখানে, D = চোখের স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্ব। সুস্থ ও স্বাভাবিক চোখের জন্য, D = 25 cm
f= লেন্সের ফোকাস দূরত্ব।
লক্ষ্যবস্তু খুব ছোট হলে সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র তাকে যথেষ্ট শিবর্ধিত করতে পারে না। সেক্ষেত্রে জটিল বা যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। একটি যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের গঠন ও কার্যনীতি নিচে বর্ণনা করা হলো।
এই যন্ত্রে দুখানি উত্তল লেন্স একটি বাস্তব নলের দুই প্রান্তে একই অক্ষ বরাবর বসানো থাকে। লক্ষ্যবস্তুর কাছে যে লেন্সখানি থাকে তাকে অভিলক্ষ্য (O) বলে [চিত্র : ৬.১৩]। এর ফোকাস দূরত্ব ও উন্মেষ অপেক্ষাকৃত ছোট। অপর লেন্সটিকে অভিনেত্র (E) বলে। অভিনেত্রের ফোকাস দূরত্ব ও উন্মেষ অপেক্ষাকৃত বড়। লক্ষ্যবস্তু দেখার জন্য অভিনেত্রের পিছনে চোখ রাখতে হয়। অভিনেত্রটি মূল নলের ভিতর একটি টানা নলের মধ্যে বসানো থাকে। টানা নলটি ওঠা-নামা করে অভিনেত্র ও অভিলক্ষ্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব পরিবর্তন করা যায়। মূল নলটি একটি খাড়া দণ্ডের (B) সাথে লাগানো থাকে। একটি স্কুর (R) সাহায্যে মূল নলটিকে লক্ষ্যবস্তু থেকে দূরে যা কাছে সরানো যায়। লক্ষ্যবস্তুকে একটি পাটাতনের (S) উপর রাখা হয় এবং একটি অবতল দর্পণের (M) সাহায্যে একে প্রয়োজনানুসারে আলোকিত করা হয়।
যন্ত্রটির নল নিচে নামিয়ে অভিলক্ষ্যকে বস্তুর খুব কাছাকাছি আনা হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত স্পষ্ট ও বিবর্ধিত বিম্ব দেখা না যায় ততক্ষণ নলটিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠানো হয়।
প্রকৃতপক্ষে অভিলক্ষ্য অভিনেত্র দুটি একাধিক লেন্সের সমন্বয়ে গঠিত হলেও আমাদের আলোচনার সুবিধার জন্য এদের প্রত্যেককে অল্প ফোকাস দূরত্বের উত্তল লেন্স হিসেবে কল্পনা করা হয়।
৬.১৪ চিত্রে যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আলোক ক্রিয়া বোঝানো হয়েছে। O ও E যথাক্রমে অভিলক্ষ্য ও অভিনেত্র। অতি ক্ষুদ্র বস্তু PQ-কে অভিলক্ষ্যের প্রধান ফোকাস Fo-এর ঠিক বাইরে স্থাপন করা হয়। এই অবস্থায় বস্তু থেকে নিঃসৃত আলোক রশ্মি অভিলক্ষ্য দ্বারা প্রতিসৃত হওয়ার পর বাস্তব, উল্টো ও বিবর্ধিত বিশ্ব P1Q1 । গঠন করে। এখন P1Q1 থেকে আলোক রশ্মি অভিনেত্র প্রতিসৃত হয় অর্থাৎ P1Q1 অভিনেত্র লেন্সের জন্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে কাজ করে। এবার অভিনেত্রকে সরিয়ে এমন স্থানে রাখা হয় যেন P1Q1 অভিনেত্রের প্রধান
ফোকাস Fe-এর ভিতরে পড়ে। এই অবস্থায় আলোক রশ্মি প্রতিসৃত হওয়ার পর একটি অবাস্তব, P1Q1-এর সাপেক্ষে সোজা ও বিবর্ধিত বিশ্ব P2Q2 গঠিত হয়। অভিলক্ষ্য ও অভিনেত্রের মধ্যে দূরত্বও এমন রাখা হয় যেন P2Q2 বিশ্ব চোখের নিকট বিন্দুতে গঠিত হয়। ফলে দর্শক বিনাক্লেশে PQ লক্ষ্যবস্তুর উল্টো ও বিবর্ধিত বিশ্ব P2Q2 স্পষ্ট দেখতে পান।
বিবর্ধন : বিবর্ধন বলতে বিশ্বের আকার এবং বস্তুর আকারের অনুপাতকে বোঝায়। এই যন্ত্রে বিশ্ব দুবার বিবর্ধিত হয়। একবার অভিলক্ষ্য ও আর একবার অভিনেত্র দ্বারা। যন্ত্রের মোট বিবর্ধন M হলে,
M= বিম্বের আকার/লক্ষ্যবস্তুর আকার
:- . M=m1 x m2…(6.15)
এখানে m1 ও m2 যথাক্রমে অভিলক্ষ্য ও অভিনেত্র লেন্সের বিবর্ধনের পরিমাণ
ধরা যাক,
u1 = অভিলক্ষ্য থেকে PQ লক্ষ্যবস্তুর দূরত্ব
V1 = অভিলক্ষ্য থেকে Pili বিশ্বের দূরত্ব
fo = অভিলক্ষ্য লেন্সের ফোকাস দূরত্ব
u2 = অভিনেত্র থেকে P11-এর দূরত্ব
V2 = অভিনেত্র থেকে P2Q2 এর দূরত্ব
fo = অভিনেত্র লেন্সের ফোকাস দূরত্ব
এখন, লেন্সের সাধারণ সমীকরণ থেকে অভিলক্ষ্যের জন্য,
:-... (6.16)
একইভাবে অভিনেত্রের জন্য
.. (6.17)
সুতরাং (6.15) সমীকরণ থেকে আমরা পাই,
কিন্তু অভিনেত্রে (উত্তল লেন্সে) অবাস্তব বিশ্বের ক্ষেত্রে v2 ঋণাত্মক ও fe ধনাত্মক
সুতরাং
কিন্তু চূড়ান্ত বিশ্ব চোখের নিকট বিন্দুতে গঠিত হলে v2 = D এখানে, D = স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্ব
... (6.19)
আরও দেখুন...